●— মিজানুর রহমান সেখ — ●
ইসলাম ধর্ম দাঁড়িয়ে আছে পাঁচটি স্তম্ভের উপর। এই পাঁচটি স্তম্ভ হল কলেমা,নামাজ,রোযা,যাকাত ও হজ্জ্ব।এই পাঁচটি বিষয়ের উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ বা অবশ্য পালনীয় কাজ।একই সাথে প্রথম তিনটির উপর আমল করা সকল মুসলমানের জন্য ফরজ এবং শেষ দু’টি সামর্থ্য অনুযায়ী আদায় করা ফরজ । নামাজ বা সালাত হল ইসলাম ধর্মের প্রধান ইবাদাত বা উপাসনাকর্ম। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। নামাজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয়। ঈমান বা বিশ্বাসের পর নামাজই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের যে পদ্ধতি ও নিয়মকানুন আছে তার উপর চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আজ আলোচনা করা হলো। নামাজ পড়ার নিয়মগুলো প্রতিদিন ঠিকঠাক পালন করলে আধ্যাত্মিক শান্তির সাথে সাথেই বেশ কিছু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উপকারিতা পাওয়া যায়।● নামাজের প্রথমেই ওজু করার রেওয়াজ।ওজুর মাধ্যমে কনুই পর্যন্ত হাত,মুখমন্ডল,নাকের ছিদ্র ও নাসাপথের শুরুর দিকটা,পায়ের পাতা থেকে গোড়ালি অবধি,ঘাড় ও মাথার চুলের অনেকাংশ জল দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়।তিনবার পরিষ্কার জল দিয়ে ধৌত করার জন্য এই অংশে থাকা জীবাণু দূর হয়। ওজুতে জল নিয়ে তিনবার গড়গড়া করার কারণে মুখের গন্ধ ও মুখগহ্বরে ও দাঁতে আটকে থাকা খাদ্যের কণা দূর হয়। যা দাঁত ও মাড়ির সংক্রমণ রোধ করে।নাকের ছিদ্র ও নাসাপথের শুরুর দিকটা ধুয়ে নেওয়ার জন্য নাকে থাকা ধুলো,কার্বন কণা, এলার্জি সৃষ্টিকারক বিভিন্ন ফুলের রেণু,নাকের শ্লেষ্মা দূর হয়।এর ফলে ফ্লু,সাইনুসাইটিস,সর্দি কাশি সহ বুকের সংক্রমণের সম্ভবনা কমে যায়।যাদের নাসাপথ শুকনো হয়ে যায় বিশেষ করে তাদের ওজুর জল ওই জায়গা ভিজিয়ে দেওয়ার কারণে রোমকূপে আটকে থাকা ময়লা বেরিয়ে গিয়ে নিঃশ্বাস-প্ৰশ্বাসের পথ পরিষ্কার হয় । চাইনিজ রিফ্লেক্সও থেরাপি অনুযায়ী মুখ,হাতের তালু ও পায়ের পাতাতে নার্ভ এন্ড গুলো থাকে।তাই বার বার জলের শিহরণ দিলে তা থেরাপির কাজ করে।এতে শরীরের স্নায়ুতন্ত্রের উপর ভালো প্রভাব পড়ে।ক্লান্তি,মানসিক চাপ ও টেনশন কমে যায়।দিনে পাঁচবার এই ওজুর ফলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা যেমন মানা হয় তেমনই ব্যাক্টেরিয়া ও জীবাণুর আক্রমণ থেকে শরীর রক্ষা পায়। জল নিয়ে গড়গড়া করার কারণে শ্বাসনালীর সংক্রমণ ও ঠান্ডা লাগার সম্ভবনা কমে যায়।মুখমন্ডল হাত দিয়ে ঘষে ধোয়ার কারণে তৈলাক্ত ত্বক থেকে তেলা ভাব কমে যায়,দূষক পদার্থ গুলো দূর হয়।মুখের ঔজ্জলতা বাড়ে ও ব্রণ সহ অন্যান্য ত্বকের সমস্যায় সুফল পাওয়া যায়। বহিকর্ণে ভিজে হাত দিয়ে ঘষার জন্য ও কর্নছিদ্রে ভিজে আঙুল দিয়ে পরিষ্কার করার কারণে কানের বাইরে থাকা ধুলো যেমন পরিষ্কার হয় তেমনই কান থেকে বেরিয়ে আসা মোম যুক্ত খইল গুলো দূর হয়। আমাদের পায়ে সব থেকে বেশি ফাংগাস ও ধুলোর সাথে জীবাণু লেগে থাকে।পায়ের পাতা ও আঙুলগুলো তে জল ও হাত দিয়ে ঘষে ওজুর সময় পরিষ্কার করার কারণে একদিকে যেমন জীবাণুগুলো দূর হয় আবার পায়ের পাতার উপর ও নীচে অনেকগুলো আকু পয়েন্ট থাকে,সেগুলো সক্রিয় হয়।এই আকু পয়েন্টে আকুপ্রেসার পেলে তা অর্থারাইটিস,পিঠে ব্যাথা ও গাঁটে ব্যাথাতে সুফল দেয়।এক কথায় ঠিকঠাক ওজু করলে তার সুফল আমাদের স্বাস্থ্যের উপর অনেকখানি।● ওজু করার পরে পরিষ্কার জায়নামাজে(prayer mat) নামাজের জন্য দাঁড়াতে হয়।যোগশাস্ত্রে যে সাতটি চক্রের কথা বলা হয়।নামাজ পড়লে সেই সাতটি চক্রই সক্রিয় হয়।অর্থ্যাৎ যোগব্যায়ামে বর্ণিত সুফল গুলো নামাজের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব।নামাজের পর্যায় গুলো পর্যালোচনা করলে জানা যায় শরীরে জমা অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়াতে নামাজের জুড়ি মেলা ভার।পেটে চাপ পড়ার কারণে ওবেসিটি কমায় ও পেটে মেদ জমাতে বাধা দেয়।সুতরাং ওজন কমাতে নামাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।নামাজের একাধিক পর্যায়ে বিভিন্ন পেশিগুলোতে টান পরে,এর ফলে শরীরের জড়তা কেটে যায় ও নিজেকে ফিট মনে হয়। সূর্যোদয়ের আগে ফরজের নামাজ পড়তে হয়। ভোর ভোর ঘুম থেকে উঠে নামাজের মতো কায়িক পরিশ্রম করলে তার সুফল অপরিসীম। সূর্যোদয়ের আগে,সূর্যাস্তের পরে,দুপুরে, বিকেলে ও রাতে এই পাঁচ সময়ে নামাজ পড়তে হয়। শরীরের উপচিতি ও অপচিতি বিপাকের ভারসাম্যে রক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ের এই নামাজ গুরুত্বপূর্ণ । সোজাভাবে দাঁড়িয়ে নামাজ শুরু করে তারপর হাঁটুতে হাত রেখে কোমরে ভাঁজ দেওয়া এবং শেষ পর্যায়ে পায়ের উপর ভর দিয়ে বসে মাথা মেঝেতে ঠেকানো— এই পুরো পদ্ধতিতে শরীরে রক্তের প্রবাহ খুব ভালো হয়। শরীরের বিভিন্ন অংশ গুলো সক্রিয়ভাবে কাজ করতে থাকে।নামাজে যখন সিজদা করা হয় তখন নামাজি ব্যক্তির মস্তিস্কে দ্রুত রক্ত প্রবাহিত হয়।যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। আবার সিজদা থেকে উঠে যখন দুই সিজদার মাঝখানে বসা হয় তখন তার পায়ের উরু ও হাঁটুর সংকোচন এবং প্রসরণ ঘটে। এতে করে মানুষের হাঁটু ও কোমরের ব্যথা উপশম হয়।নামাজ মুসলিমদের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক পবিত্রতা সাধনের অনন্য হাতিয়ার।