
কাদেরী টাইমস অনলাইন ডেস্ক :
মুসলিমদের যে দুটি উৎসবে বৃহৎ আকারে একত্রিত হয়ে যে সালাত আদায় করা হয়, তা হলো:ঈদুল ফিতর আরবি হিজরী সনের দশম মাস, শাওয়াল মাসের প্রথম দিনে উদ্যাপন করা হয়।
দ্বিতীয় হল ঈদুল আযহা। হজ্জ তীর্থযাত্রার প্রধান দিন আরাফাতের দিনের পরবর্তী দিন হিজরী সনের দ্বাদশ মাস, জ্বিলহজ্জ মাসের দশম দিনে উদ্যাপন করা হয়।
ঈদুল আজহা মূলত আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো ‘ত্যাগের উৎসব’।ঈদুল আযহার সালাত ওয়াজিব সালাত হিসাবে গণ্য করা হয় শরিয়ত পদ্ধতিতে । ঈদুল আযহা সালাত আদায়ের পদ্ধতি।
ঈদের দিন সূর্য উঠার ২০ থেকে ৩০ মিনিটের পর থেকে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ঈদের সালাত আদায় করা হয় মসজিদ, ঈদগাহ,অথবা কোন খোলা মাঠে। ঈদের নামায অন্যান্য নামায হতে সম্পূর্ণ বিপরীত হয়। ঈদের ওয়াজিব সালাত দুই রাকাত এবং ৬টি অতিরিক্ত তাকবীর (ইমাম সাহেব ও মুসল্লিদের) বলা ওয়াজিব।
ঈদের সালাত আদায়ের পদ্ধতি:
নিম্নরূপ-
ঈদের নামাযের কোন প্রকার আযান বা একামত দেয়ার প্রয়োজন হয় না। সালাতের নিয়ত করা।
উচ্চারণঃ- নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাতাই সালাতিল ঈদিল আদহা মাআসিত্তি তাকবি-রাতি ওয়াজিবুল্লাহি তাআলা ইক্তাদাইতুল বিহাজাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবর।
অর্থঃ বাংলায় নিয়ত:
আমি কিবলা মুখি হয়ে ঈদুল আযহার দু’রাকাত ওয়াজিব নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে এই ইমামের পিছনে আদায় করার নিয়ত করিতেছি আল্লাহু আকবর ।সর্বপ্রথম ইমাম সাহেব ইমাম সাহেবের নিয়ত ও মুসল্লিগণ মুসল্লিগণের নিয়ত করবেন। অতঃপর তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বেঁধে আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ্ ও সানা পড়বেন।
সানা পড়া– সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবি-হামদিকা ওয়া-তাবারাকাসমুকা ওয়া-তা’আলা-জাদ্দুকা ওয়া-লা-ইলাহা গায়রুকা। অতঃপর প্রথম তাকবির দুই হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে আল্লাহু-আকবর বলে হাত নিচের দিকে ছেড়ে দিবেন প্রথমবারের মতো দ্বিতীয়বার একি ভাবে করবেন,কিন্তু তৃতীয়বারে হাত বেঁধে নিবেন। তাকবীর শেষে হাত বেঁধে সূরা ফাতিহার সাথে একটি সূরা মিলিয়ে পাঠ করবেন ইমাম সাহেব। এবার তাকবীর বলে রুকুতে যাবেন এবং দুই সেজদা ও বাকি কাজ যথাযথভাবে আদায় করবেন। প্রথম রাকাত শেষ।
দ্বিতীয় রাকাতে : ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করবেন। মনে রাখতে হবে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে পুনরায় তিনটি তাকবীর ইমাম সাহেব বলবেন। প্রত্যেক তাকবীরে হস্তদ্বয় কান পর্যন্ত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দিবেন হাত বাঁধবেন না। চতুর্থ তাকবীরে রুকুতে যাবেন এবং বাকি কাজগুলো যথাযথভাবে আদায় করবেন এবং সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করবেন।
সালাত শেষে ইমাম সাহেব দুটি খোতবা দেবেন আর মুসল্লিরা খুতবা মনোযোগের সঙ্গে শুনবে।
ঈদুল আযহার খোতবাতে কুরবানির মাসয়ালা ও তাকবীরে তাশরীক শিক্ষা দেবেন। সর্বশেষে ইমাম সাহেব মুসল্লিদের নিয়ে মুসলিম মিল্লাতের ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি এবং দেশের কল্যাণ কামনা করে মহান আল্লাহ্ পাকের দরবারে বিশেষ দোয়া প্রার্থনা করবেন।
ঈদের নামাজের তাকবির
বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হুজুর রাসূলে পাক (সাঃ) ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিন সালাত আদায় করতেন। আর সালাত শেষে খুতবা দিতেন। সূত্রঃ সহীহ বুখারী-হাদিস /৯০৯, ৯১২।
ঈদের দিনের কিছু সুন্নত ও মোস্তাহাব
১. মিসওয়াক করা সুন্নত। ২. গোসল করা সুন্নত। ৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। ৪. ঈদুল আজহায় কিছু না খেয়ে এবং ঈদুল ফিতরে কিছু খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত।৫. ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া উত্তম। এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া, অন্য রাস্তা দিয়ে আসা মোস্তাহাব। ৬. ঈদগাহে যাওয়ার পথে নিচুস্বরে তাকবির (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) পড়া সুন্নত। ৭. সাধ্যমতো উত্তম পোশাক পরিধান করা মোস্তাহাব। ৮. (ঈদুল ফিতরে) নামাজের জন্য ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকায়ে ফিতর আদায় করা সুন্নত (দাতা ও গ্রহীতার সুবিধার্থে রমজানেও প্রদান করা যায়)। ৯. ঈদের দিন চেহারায় খুশির ভাব প্রকাশ করা এবং কারো সঙ্গে দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলা মোস্তাহাব। ১০. আনন্দ- অভিবাদন বিনিময় করা মোস্তাহাব।
(ফতোয়ায়ে শামি : ১/৫৫৬, ৫৫৭, ৫৫৮, হেদায়া: ২/৭১, বুখারি: ১/১৩০, ইবনে মাজাহ: ৯২)।
ঈদ উল আযহা কোরবানির ঈদ নামেও পরিচিত। এই উৎসবকে ঈদুজ্জোহাও বলা হয়।